শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অজানার প্রশ্ন- নটবর গুপ্ত



জানি না-
কতটা পথ হাঁটলে তোমার সহচারী হওয়া যায়,
কতটা দিন হাতে হাত রাখলে তোমায় বন্ধু বলা যায়,
কতটা গলা সাধলে তবে তোমার সুরের গান গাওয়া যায়,
কতটা তরী বাইলে তোমার মাঝি হওয়া যায়,
ক ফোঁটা চোখের জল ঝরালে তোমার মনের ঘরামী হওয়া যায়,
জানিনা,
হৃদয় কতটা রক্তাক্ত হলে তারে যাতনা বলা যায়,
কতটা রাত জাগলে তাকে নির্ঘুম বলা যায়,
কতটা দিন গুনলে তারে অপেক্ষা মনে হয়
কতটা ও প্রানেজানিনা,
 প্রান বাধলে তারে ভালবাসা বলা যায়।
২৯/০১/২০১৪




                                                                                                                                                              

বৈশাখ আসছে - নটবর গুপ্ত




বৈশাখ আসছে,  
বালিকার সাজঘরের প্রদীপ জ্বলছে,
পরতালে তাই সে দেখছে –
নুপুরটা রুন-ঝুন বাজছে কিনা,
নীল নেইল পালিশে নখের বাহারিপনা আসছে কিনা,
বকুলের মালাটা এলো চুলে দোল খেলবে কিনা,

ভাবছে সে-
খোপায় কি সে দিবে আধা ফুতন্ত গোলাপ কড়ি
নাকি সমস্ত চুলে জোনাকের মত জ্বালাবে গাঁদা ফুলের পাপড়ি
না মাথায় পরবে রজনীগন্ধার বেড়ি
এসকল শত দোদুল্যমনায় দুলছে তার চিন্তার রঙিন ঘুড়ী।

প্রনমিতে চাহিছে মন-
সৌন্দর্য দেবতার বুকের মাঝে
হাতের ওপর হাতটি রেখে
কমল স্পর্শে চমকে চলে তার কল্প ধারা,

কপালেতে লাল টিপে আয়নায় দেখে নিজেকে
দিশাহারা তার উথলি সকলি পুলকে-
লুকিয়ে অবিরত হাসিছে সে, আপনিতে নাচিছে নয়ন তারা
১২/০৪/২০১৪ ইং
৪৬০, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



গাজার শিশু ও মায়ের গল্প - নটবর গুপ্ত


অন্ধকারে আঁতকে উঠে শিশু এখানে ঘুমের সহবাসে, 

যেন যম পুরের বর্গী আসিল তাদের স্বপ্নের দেশে,
গোলার শব্দ শুনে ঘুমতে যায় এরা আজ
আর তারই শব্দে জেগে ওঠা যেন এখানের নিত্য রেওয়াজ,

ঘুমের মধ্যে মা তার শিশুকে হাতড়ায়
সেখানে সোনা মাণিকের বদলে শুধু খেলনার পুতুলটিই পায়,
আজ ওর জন্মদিন
আগের জন্মদিনে এই পুতুলটাই ওকে কিনে দিয়েছিল মা,
ওর বাবা দিয়েছিল এইতো আকাশী রঙের এই রঙিন জামা,

ভাবছে পুতুলের মত ছেলেটা তার
সত্যিই আজ স্মৃতির পুতুল হয়ে গেল?
মা চাইছিল ছেলের এই জন্মদিনে আতশ বাজি ফোটাবে
কিন্তু সত্তিকারের বাজিতে যে তার প্রাণটা যাবে
তা কেইবা ভেবেছিল কবে।

সৃষ্টি কর্তাকে কে মা ধন্যবাদ দিচ্ছে
চোখ দুটো কেড়ে নেওয়ার জন্য,
তাঁকে তো আর দেখতে হয়নি নিজের ছেলের প্রানহীন দেহ।
আর চোখ থাকলেই কিই বা দেখতে পেত সে?
সমস্ত নরম বেবি অয়েল মাখা দেহ তো তার উড়ে খণ্ড খণ্ড হয়েছিল।

সে জানে সে আর দেখতে পাবে না নেতা নিয়াহুর হৃৎপিণ্ড কত শক্ত
সে জানে হাজার বার ওকে ফাঁসিতে দিলেও এর প্রতিশোধ হবে না
তবু সে একটি বার দেখতে চায় নেতানিয়াহুর ফাঁসিতে ঝুলানো লাশ
কথা দিয়েছে ঐ মা
সে ঐ একটি বারের জন্য চোখ মেলবেই।



রুম নং- ৪৬০ - নটবর গুপ্ত



৪৬০ এর দরজা খুলে যখন মারি উঁকি
ডান দিকে তার রাম নামের রাবন মামাকে দেখি,
গামছা নাড়া,সাবান থোয়া, কিংবা ধোয়া প্যান
এসব নিয়ে সারাটা সময় আমায় দেন জ্ঞান,
মামির সাথে ঝগড়া করে মুখ করেন কালো হাড়ি
মামিকে কিছু বলতে না পেরে আমায় মারেন ঝাড়ি,

ওদিকে আছেন চন্দন দাদা ভাল মানুষ সেজে
মোবাইল ফোনে থাকেন তিনি পরকীয়ায় মজে,
প্রেম প্রেয়সী চারুলতা তাহার হৃদয়ে দিয়েছে ব্যাথা
এসব কথা লিখতে গেলে ফুরাবে দিস্তা খাতা,

এদিকে থাকেন বাপ্পি দাদা, নতুন জামা পরে যিনি যান আজিমপুরে
প্রেমের সাথে বউদি তাকে নুডুলস দেন বাটি ভোরে,
নুডুলস এর কিছুটা খেয়ে ডেকুর তোলেন ভরা পেটে
বাকিটা আমরা প্রেমহীনের দল খাই চেটে পুটে,

মানিক দাদার রান্না-বান্নায় বড়ই হস্ত পাকা
রাত ৪ তার আগে তাকে যায়না রুমে দেখা,
তাহার আবার প্রেম প্রীতির নাইকো কোন ইতি
একে একে তার যায় এর আসে মলি, পলি এর স্মৃতি,

রিপন ভাইয়ার ঘুম ভাঙে না যেন কুম্ভুকর্ণ
যতই তাকে যাই বল এটাই তার ধর্ম,
অবশেষে আমি বোকা ছেলে এই ছবিটি আঁকি
আমরা সবাই মিলে মিশে যেন ৪৬০ এ থাকি।




ভাবনার পাখা - নটবর গুপ্ত



নগরায়নের এই বাস্ত শহরে আমারই কোন কাজ নেই
ভাবছি তোমায় অলস বসে হারিয়ে সকল কাজের খেই,
বাস্ততা আমার চায় না সময়, ভাবনায় তাকে হারিয়ে দেই
কাজ খুঁজে নেয় অলস সময় ভাবনায় তাই ডুবিয়া রই।

ভাবনার প্রতি বাকে বাকে
তোমারি ছবি ঝাকে ঝাকে
উড়ছে তারা পাখনা মেলে বাথা জড়ানো সুরের ডাকে
গাথিছে তার কথা মালা বিরহ বিধুর ছন্দ এঁকে।

প্রত্নতাত্ত্বিকের ন্যায় খুঁড়ছি তোমায় আমার মনের গহব্বরে
তোমার মন যাচ্ছে বেঁকে গুহা বাকানোর অভ্যন্তরে,
চলছি আমি তোমার পিছু বুলন্দেরই দ্বারে দ্বারে
খুঁজছি তোমায় হন্যে হয়ে ভুতুড়ে গুহার অন্ধকারে,